স্মার্টফোন কেনার গাইড ২০২৫ – ফোন কেনার আগে কী দেখবেন?
মোবাইল কেনার গাইড – ফোন কেনার আগে যে ৭টি জিনিস খেয়াল করবেন
নতুন মোবাইল কেনার সময় অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান—কোন ফোনটা নেবেন, কি দেখে কিনবেন, বাজেট কত রাখবেন এসব নিয়ে মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। আজকাল ফোনে শুধু কথা বলাই না, ছবি তোলা, ভিডিও দেখা, গেম খেলা, এমনকি পড়াশোনা বা অফিসের কাজ—সবই হয়। তাই একটা ভালো মোবাইল কিনে ফেলা খুব দরকার। কিন্তু বাজারে এত ব্র্যান্ড আর মডেল দেখে অনেকেই কনফিউজড হয়ে যান।
কিছু মানুষ ক্যামেরার প্রতি আকৃষ্ট হন, আবার অনেকে দ্রুত পারফরম্যান্সের খোঁজে থাকেন। কেউ ব্যাটারির ব্যাপারে চিন্তা করেন, আবার কেউ স্টোরেজের ওপর গুরুত্ব দেন। তাই মোবাইল ফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক মাথায় রাখা আবশ্যক, যাতে পরবর্তীতে নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়। শুধু দাম বা বিজ্ঞাপন দেখে ফোন ক্রয় করলে অনেক সময় হতাশায় পড়তে হয়।
ফোন কেনার আগে নিজের প্রয়োজন ঠিক করে নিন
ফোন কেনার আগে ভালো ভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন, আপনি ফোনটি কোন কাজে ব্যবহার করতে চান? অনেকেই না ভেবে-চিন্তেই ফোন কিনে ফেলেন, তারপর বুঝতে পারেন সেটি তাদের কাজে ঠিকমতো লাগছে না। তাই ফোন কেনার আগে নিজের প্রয়োজনগুলো স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন ধরুন, আপনি যদি শুধু ফেসবুক, ইউটিউব, হালকা ব্রাউজিং বা WhatsApp ব্যবহার করেন, তাহলে সস্তা ফোনেই হয়ে যাবে। ১০-১২ হাজার টাকায় ভালো ফোন পাওয়া যায় এখন। কিন্তু আপনি যদি গেম খেলেন, ভিডিও এডিট করেন, বা ফোনে অনেক অ্যাপ চালান — তাহলে একটু ভালো কনফিগারেশনের ফোন দরকার হবে। বেশি RAM, ভালো প্রসেসর, এগুলা দরকার।
আবার কেউ ক্যামেরার গুণগত মান নিয়ে উদ্বিগ্ন, কেউ বা বড় স্ক্রিনের পক্ষে। সবার পছন্দ বা প্রয়োজন একরকম নয়। তাই আমি sempre বলি, প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি কী চান। প্রয়োজন অনুযায়ী ফোন কেনা হলে আপনার টাকা অপচয় হবে না এবং আফসোসও করতে হবে না।
প্রসেসর: ফোনের গতি নির্ভর করে এই উপাদানের উপর
একটি ফোনের গতি, স্মুথনেস, এবং গেমিং পারফরম্যান্স , সবকিছু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রসেসরের গুণগত মানের উপর নির্ভর করে। অনেক ব্যবহারকারী ফোনের ক্যামেরা নিয়ে চিন্তিত থাকলেও, প্রসেসর নিয়ে সচেতন হন না। বর্তমানে বাজারে পাওয়া বাজেট ফোনগুলোতে Helio G85, G88, বা Snapdragon 680 ধরনের চিপসেট দেখতে পাওয়া যায়, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট সন্তোষজনক। মিড রেঞ্জ ফোনগুলোতে Snapdragon 695 বা Dimensity সিরিজের চিপসেটগুলো আরও উন্নত পারফরম্যান্স অফার করে। গেমার বা হেভি ইউজারদের জন্য Dimensity 8200 বা Snapdragon 7 Gen 1 এর মতো প্রসেসর খুঁজে নেওয়া উচিত। ইউটিউবে "Processor Comparison" শিরোনামের ভিডিওগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজে প্রসেসরের গুণগত মান তুলনা করতে পারবেন।
ব্যাটারি ও চার্জিং স্পিড
একটি ফোনের কার্যকারিতা নির্ভর করে এর ব্যাটারির ক্ষমতার ওপর। সাধারণত, ফোনে কমপক্ষে ৫০০০ mAh ব্যাটারি থাকা উচিত, তবে অনেক নতুন মডেলে ৬০০০ mAh ব্যাটারিও পাওয়া যায়। এছাড়াও, ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির উপস্থিতি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকের জন্য অন্তত ১৮W অথবা ৩০W ফাস্ট চার্জিং সুবিধা থাকা উচিত। Type-C চার্জিং পোর্টের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। যারা দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও দেখেন বা গেম খেলেন, তাদের জন্য ব্যাটারি এবং চার্জিং স্পিড নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়।
ক্যামেরা: শুধুমাত্র মেগাপিক্সেল না, বরং সেন্সরটাও গুরুত্বপূর্ণ
অনেকে মনে করেন ১০৮MP মানে একেবারে সেরা ক্যামেরা। তবে বিষয়টি এত সহজ নয়। কখনও কখনও, ৫০MP ক্যামেরা যদি উন্নত সেন্সর (যেমন Sony IMX) ব্যবহার করে নির্মিত হয়, তবে এটি অনেক ভাল মানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। ক্যামেরার সেন্সর, অ্যাপারচার, এবং ইমেজ প্রসেসিং—all এই বিষয়গুলিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভিডিও শুটিংয়ের ক্ষেত্রে EIS বা OIS প্রযুক্তির উপস্থিতি একটি বাড়তি সুবিধা। যারা সেলফি তোলা পছন্দ করেন, তাদের জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরার মানও দেখতে হবে। এবং যদি ক্যামেরা সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তাহলে ইউটিউবে সেই ফোনের ক্যামেরার উদাহরণ দেখে নিতে পারেন।
ডিসপ্লে: চোখের আরামের গুরুত্ব
সারাদিন ফোনের স্ক্রীনে চোখ রাখলে খারাপ ডিসপ্লের কারণে অস্বস্তি হতে পারে। বর্তমানে AMOLED ডিসপ্লে খুবই জনপ্রিয়, কারণ এতে রং অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং কালো অংশগুলো গভীর কালো দেখায়। ভিডিও দেখা বা গেম খেলার জন্য AMOLED পারফেক্ট। অন্যদিকে, যারা নিয়মিত পড়াশোনা বা অফিসের কাজ করেন, তাদের জন্য IPS ডিসপ্লেও উপযোগী। বর্তমানে অনেক ফোনে 90Hz বা 120Hz রিফ্রেশ রেট পাওয়া যায়, যা স্ক্রলিং ও অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করে। ডিসপ্লের সাইজ সাধারণত 6.5 ইঞ্চির আশেপাশে হলে এটি সুসম্পন্ন এবং ভারসাম্যপূর্ণ মনে হয়।
র্যাম ও স্টোরেজ: পারফরম্যান্সের মূল ভিত্তি
বর্তমান সময়ে ৪GB র্যাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মনে হয় না। যদি আপনার উদ্দেশ্য একসাথে কয়েকটি অ্যাপ ব্যবহার করা হয়, তাহলে অন্তত ৬GB র্যাম থাকা উচিত। ৮GB র্যাম থাকলে তা আরও উন্নত পারফরম্যান্স প্রদান করে। স্টোরেজের ক্ষেত্রে, ১২৮GB এখন সাধারণ মান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ ছবি, ভিডিও, গেম ইত্যাদির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা প্রয়োজন হয়। UFS 2.1 বা 2.2 স্টোরেজ প্রযুক্তি থাকলে ফোনের কার্যক্ষমতা আরো দ্রুত হয়। অনেক ব্যবহারকারী microSD কার্ডের সাহায্য নেন, সেক্ষেত্রে ফোনে একটি বিশেষdedicated স্লট রয়েছে কিনা, সেটি অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।
সফটওয়্যার আপডেট ও ব্র্যান্ড সাপোর্ট
অনেক ফোনে দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ দেওয়া থাকে (bloatware), যা ফোন স্লো করে ফেলে। তাই যতটা সম্ভব ক্লিন UI সহ ফোন কিনুন। এছাড়া, আপনি যে ব্র্যান্ডের ফোন কিনছেন, তারা নিয়মিত Android ও security আপডেট দেয় কি না—তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি আপনি ২-৩ বছর ফোন চালাতে চান, তাহলে সফটওয়্যার সাপোর্ট ভালো থাকা জরুরি। আর ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার আপনার এলাকায় আছে কিনা দেখে নিন। ফোনে যদি কখনো সমস্যা হয়, তখন দ্রুত সমাধান পাওয়া যাবে।
উপসংহার
ফোন কেনা এখন অনেক সহজ, আবার অনেক জটিলও। কারণ অপশন অনেক, কিন্তু সবাই নিজের দরকারটা বুঝে চলে না। কেউ শুধু ক্যামেরা দেখে কিনে, কেউ আবার শুধু দাম দেখে। কিন্তু সঠিকভাবে সব দিক খেয়াল করে, নিজের প্রয়োজন বুঝে যদি আপনি ফোন বেছে নেন, তাহলে ফোনটা অনেক দিন আপনার সাথী হয়ে থাকবে। আর আপনি যদি এখনও কনফিউজ থাকেন—আমি আছি! বাজেট বা দরকার বললেই আপনাকে সাজেস্ট করতে পারি কোন ফোনটা আপনার জন্য পারফেক্ট।